শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন

বন্যায় ভেস্তে গেছে প্রকল্প: ৯ মাস ধরে বিদ্যুৎবিহীন চার গ্রামবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্গম হাওর এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে জ্বলবে বিদ্যুতের আলো। শিক্ষার্থীরা সেই আলোতে বসে পড়বে। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের। এমনটাই ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এতে খুশিও ছিলেন হাওরপারের মানুষ। কিন্তু ৬ বছরের মাথায় এসে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি। অন্ধকারেই বসবাস করতে হচ্ছে ৪ গ্রামের মানুষকে।

জানা যায়, হাওর-বাওড়ের জেলা সুনামগঞ্জের সবচেয়ে দূর্গম এলাকা শাল্লায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালু হয় ‘সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প’। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্পে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। মৌরাপুর, আগুয়াই, বিলপুর, শাসখাই গ্রাম ও শাসখাই বাজারের মানুষ এ প্রকল্পের গ্রাহক। কিন্তু গ্রাহকদের উপকারের বদলে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের আগুয়াই-শাসখাই বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে চার একর জমির ওপর এটি স্থাপন করা হয়েছে। শাসখাই বাজার থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে শাসখাই হাওরপারে প্রকল্পের অবস্থান। সেখানে যাওয়ার রাস্তাও ভাঙাচোরা। সড়কের পাশ ঘেঁষে এবং হাওরের ওপর দিয়ে ছোট ছোট খুঁটি দিয়ে প্রকল্প থেকে লাইন গেছে মানুষের বসতবাড়ি ও বাজারের দোকানপাটে। এসব খুঁটি এখন বিভিন্ন স্থানে হেলে পড়ায় স্থানীয় মানুষ বাঁশ দিয়ে বেঁধে রেখেছেন।

প্রকল্পের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের ভেতরে মাটি থেকে সামান্য উঁচুতে সারিবদ্ধভাবে ২ হাজার ২৩টি প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় রয়েছে দুটি দোতলা পাকা ভবন। একটিতে রয়েছে যন্ত্রপাতি ও প্রকল্পের লোকদের থাকার ব্যবস্থা। অন্যটি শুরু থেকেই তালা দেওয়া।

শুরুতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে সময় কমতে থাকে। পরে দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়া হলেও গত ১৬ জুনের ভয়াবহ বন্যায় প্রকল্পের ভেতরে পানি ঢুকে সব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে অকেজো হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘ ৯ মাস যাবৎ বিদ্যুৎবিহীন এসব গ্রামের মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

তারা জানান, ‘আমরা এ প্রকল্পে আর থাকতে চাই না। বিদ্যুৎবিহীন আমরা চার গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। সারা বাংলাদেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বললেও আমরা এখনও অন্ধকারে।’

স্থানীয় বাসিন্দা আইজার আলী  বলেন, ৯ মাস যাবৎ ৪ গ্রাম বিদ্যুৎবিহীন। বন্যায় প্রকল্পের সব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। এতে আমরা খুব ভোগান্তিতে পড়েছি।

স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন বর্মণ  বলেন, বিদ্যুৎ ছাড়া আমরা খুব কষ্টে আছি। দিনে কোনো রকম বিদ্যুৎ ছাড়া থাকলেও রাতে থাকা অসম্ভব। তাই দ্রুত এই প্রকল্পটি মেরামত করে সচল করে দেওয়া হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা রাজিব বর্মণ  বলেন, আমরা আর এই প্রকল্পে থাকতে চাই না। আমরা পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগে যেতে চাই। কারণ অন্ধকারে বসবাস করতে আর ভালো লাগছে না আমাদের।

সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান  বলেন, বন্যায় সোলার প্রকল্পে পানি ঢুকে অনেক যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো মেরামতের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব  বলেন, বন্যায় সোলার প্রকল্পের সব যন্ত্র নষ্ট হওয়ায় ৪টি গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। ফলে তাদেরকে আমরা দ্রুত পল্লী বিদ্যুতের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335